ইনস্টিটিউটশনাল প্রাইড: অহেতুক অহংকার না আত্মসম্মানের দাবিদার?
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতা বিদ্যমান, যা ‘ইনস্টিটিউটশনাল প্রাইড’ নামক এক বিতর্কিত মনোভাবের জন্ম দিয়েছে। রাবির ন্যাশনাল ছাত্রদের গুণে না। রাবির সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ছাত্ররা কলা ফ্যাকাল্টির ছাত্রদের দিকে নাক সিঁটকায়। ঢাবি রাবিকে তুচ্ছ মনে করে, আর বুয়েট তো ঢাবির প্রতিও তেমন সম্মান দেখায় না। কিন্তু, সত্যি বলতে, হার্ভার্ড কিংবা এমআইটি বুয়েটকে আদৌ চেনে কি?
এই অহেতুক গৌরববোধ বা ‘ইনস্টিটিউটশনাল প্রাইড’-এর ভিত্তি কী? প্রাইড আসে গবেষণা, উদ্ভাবন, আবিষ্কার, প্রকাশনা, পুরস্কার, এবং বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব দেখে। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই আন্তর্জাতিক মানে জ্ঞান ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি।
আমাদের চোখে ‘ইনস্টিটিউটশনাল প্রাইড’ মানে লাল বিল্ডিং, সাদা বিল্ডিং, বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস, অপরাজিতা-কলমীলতার চা, গান, কনসার্ট, আর ক্যাম্পাসের হুডি পরিহিত স্মৃতি। এগুলো কি সত্যিকার অর্থে গৌরবের জায়গা হতে পারে? জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো কি জনগণের জন্য কোনো প্রোডাক্টিভ ভ্যালু তৈরি করতে পেরেছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আমলা হয়ে যায়, যা প্রকৃত অর্থে দেশের উন্নয়নে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখে না।
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান নির্মাণ ও উদ্ভাবন। অথচ এই দিকগুলোতে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। ফলস্বরূপ, ‘ইনস্টিটিউটশনাল প্রাইড’ কেবল এক অহেতুক অহংকারে পরিণত হয়েছে, যা আমাদের পা মাটিতে পড়তে দেয় না।
লজ্জা হওয়া উচিত আমাদের! তবু আমরা গর্বিত—কিছু না পারলেও আমরা ‘পিএইচডি করা'।