স্ত্রীকে ভালোবাসা সহজ নয়। উদাহরণ দিলে বিষয়টা বুঝতে পারবেন।
বিয়ের পর মোবাইলের ওয়ালপেপারে স্ত্রীর ছবি রেখেছিলাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় এক বন্ধু সেটা দেখলো।
তারপর সে হাসতে হাসতে অন্য বন্ধুদের বললো,"রিফাতের মোবাইল দেখ। বউয়ের ছবি দিয়ে রেখেছে। ব্যাটা বউ পা'গ'ল।"
সঙ্গে সঙ্গে সবার মধ্যে হাসির ধুম পড়ে গেলো।
এমন বি'ব্র'ত হয়ে পড়লাম যে, বলার মতো নয়।
বি'ব্র'ত অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য ওদের বললাম,"তোরা যা ভাবছিস তা না। আসলে অন্য একটা ছবি সিলেক্ট করতে গিয়ে ভু'লে এই ছবিটা পোস্ট হয়ে গেছে। আমি নিজেও খেয়াল করি নি। এই দেখ ছবিটা এখনই ডি'লি'ট করে দিচ্ছি।"
তারপর ওদের দেখিয়ে স্ত্রীর ছবিটা বদলে বন্ধুদের নিয়ে তোলা একটা ছবি মোবাইলের ওয়ালপেপারে দিলাম।
আরেকটা ঘটনা বলি।
স্ত্রীর পরি'শ্রম যেনো কম হয় এজন্য মাছ মুরগী কিনলে বাজার থেকে কু'টি'য়ে আনতাম। স্ত্রীকে রান্নায় সাহায্য করতাম। ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড় নিয়ে আসতাম।
মা এসব দেখতেন। এবং মা'র চোখ দেখে বুঝতে পারতাম তিনি এসব পছন্দ করছেন না। তবে তিনি কিছু বলতেন না। কিন্তু যেদিন স্ত্রীর কাপড় ধুলাম সেদিন তিনি আর চু'প থাকতে পারলেন না।
কা'টা কা'টা উচ্চারণে বললেন,"বিয়ে করতে না করতেই বউ পা'গ'ল হয়ে গেছিস! বউয়ের ক'ষ্ট স'হ্য হচ্ছে না, তাই না? ঘরের এসব কাজ আমরা সারা জীবন করি নি?"
এমন নয় যে, আমি শুধু স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করি, মাকেও সাহায্য করি। কিন্তু স্ত্রীকে সাহায্য করাটা তিনি কেনো যেনো নিতে পারতেন না।
আমি 'বউ পা'গ'ল', মায়ের কাছ থেকে এই কথাটা গেলো খালাদের কাছে। আর খালাদের কাছ থেকে পুরো আত্মীয় মহলে র'টে গেলো।
তারপর থেকে আমার আড়ালে এবং সামনে, ঘরে কিংবা বাইরে, হয় রেগে নয়তো কটাক্ষ করে, আত্মীয়দের মধ্যে কেউ না কেউ বলতো,"রিফাত বউয়ের আঁচল ধরে ঘোরে। ও বউ পা'গ'ল হয়েছে। পুরুষ হতে পারে নি।"
যখন তারা এসব বলতো, তখন ল'জ্জা'য় অপ'মানে শে'ষ হয়ে যেতাম। এই ল'জ্জা এবং অপ'মান থেকে মু'ক্তি পাওয়ার জন্য এবং নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করার জন্য স্ত্রীকে সাহায্য করা ব'ন্ধ করে দিলাম।
আরেকটা ঘটনা বলি।
বিয়ের শুরুর দিকে প্রতিদিন অফিসের লাঞ্চের সময় স্ত্রীকে ফোন করতাম। সে খেয়েছে কিনা জানতে চাইতাম। সেও আমাকে ফোন দিতো। ফোনের এই কথপোকথন কলিগদের এড়িয়ে করতাম। তবু কী করে যেনো এক কলিগ ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। আর তারপরই পুরো অফিসে ছড়িয়ে পড়লো, রিফাত সাহেব বউ পা'গ'ল।
এরপর থেকে আমাকে দেখলে অফিসের সবাই ঠোঁট টি'পে হাসতো। কী যে জ্বা'লা'ময়ী সে হাসি! সেই হাসির য'ন্ত্র'ণা থেকে র'ক্ষা পাওয়ার জন্য অফিস থেকে স্ত্রীকে ফোন করা ব'ন্ধ করে দিলাম। আর সে ফোন করলে সবাইকে শুনিয়ে রূঢ় ভাষায় বলতাম,"প্রয়োজন ছাড়া ফোন দেবে না। অফিস কাজ করার জায়গা। ডেটিং করার জায়গা না।"
তাই বলছিলাম, স্ত্রীকে ভালোবাসা সহজ নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম, আমি পৃথিবীর সব কিছু ভালোবাসতে পারবো। মা, বাবা, ভাই, বোন, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয়, পশু পাখি, এমন কি জড় পদার্থকেও। এবং এসবের জন্য কেউ আমাকে ব্য'ঙ্গ করবে না, আমার ওপর ক্ষি'প্ত'ও হবে না। কিন্তু স্ত্রীকে ভালোবাসতে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যাবে স'র্ব'না'শ! শা'স্তি হিসেবে জুটবে 'বউ পা'গ'ল' উপাধি। আর একজন পুরুষের জীবনে এই উপাধির চেয়ে ভ'য়া'ব'হ আর কিছু নেই।
যাই হোক, গল্পে ফিরে আসি।
এদিকে সবার কাছে নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করতে গিয়ে স্ত্রীকে অ'ব'হে'লা করতে করতে ওর জীবনটাকে দু'র্বি'ষ'হ করে তুললাম। ওর জীবন থেকে হাসি হারিয়ে গেলো।
একদিন মাঝ রাতে ঘুম ভে'ঙে দেখলাম, স্ত্রী পাশ ফিরে শুয়ে ফুঁ'পিয়ে ফুঁ'পিয়ে কাঁ'দ'ছে।
জানতে চাইলাম,"কী হয়েছে?"
সে অদ্ভুত বি'ষ'ণ্ণ গলায় বললো,"আমার কী হয়েছে, আমি কেমন আছি, এসব কখনো জানতে চেয়ো না। মনে রেখো, দেয়ালেরও কান আছে। শে'ষে সবাই জেনে যাবে, তুমি বউ পাগল।"
ওর কথা শুনে এতো খা'রা'প লাগলো বলার মতো নয়। বু'ক চি'রে একটা গভীর দীর্ঘ'শ্বাস পড়লো। সেদিন রাতে আর ঘুম এলো না।
পরদিন ভোরে আমার নি'র্ঘুম স্ত্রী শোয়া থেকে উঠলে ওকে বললাম,"এতোকাল পুরুষ হতে গিয়ে আসলে কা'পুরুষের মতো আচরণ করেছি। এবার সত্যিকারের পুরুষ হবো। কারণ এবার পৃথিবীর সবচেয়ে ক'ঠি'ন কাজটা করবো।"
স্ত্রী বললো,"কী সেটা?"
ওর ম'লি'ন দু গালে আলতো হাত রেখে বললাম,"বউ পা'গ'ল হবো।"
"একজন যুবকের কথা"
#collected
Alamin Sheikh
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?